ঢাকা , বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ , ২৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিদিন ১৯ জনের মৃত্যু মহালছড়িতে ভাইয়ের বিরুদ্ধে সম্পদ আত্মসাতের অভিযোগ শ্রীপুরে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে থানার এএসআই ক্লোজড সাঘাটার ভূমিদস্যু সুইট ও সহযোগীদের শাস্তির দাবি ফুলবাড়ীতে প্রতিপক্ষের গাড়ি ভাঙচুর ও মারপিট ৩১ শয্যার হাসপাতালে ২২ পদ শূন্য, ব্যাহত স্বাস্থ্যসেবা ভূমি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেননি ডিসি আসামি ছিনিয়ে নিল জনতা আসামি ছিনিয়ে নিল জনতা আসামি ছিনিয়ে নিল জনতা বান্দরবানে হত্যা মামলা তুলে নিতে হুমকি আমতলীতে ৫০ শয্যা হাসপাতালে ২২জন স্টাফদের মধ্যে১৬ জনের শুন্যপদ থাকায় চিকিৎসাসেবা ঝুঁকে পরছে হেরা ফেরি ৩-তে ফিরছেন টাবু বাশার-তিশার নতুন রোমান্সের গল্প ‘বসন্ত বৌরি’ ওজন কমাতে সার্জারি, প্রাণ গেল মেক্সিকান ইনফ্লুয়েন্সারের ‘স্কুইড গেম’ অভিনেত্রী লি জু-শিল আর নেই বিচ্ছেদের পর ফের নতুন প্রেম খুঁজছেন মালাইকা অরোরা? দেশের প্রেক্ষাগৃহে ‘বলী’ আসছে ৭ ফেব্রুয়ারি হামলার পর প্রথমবার জনসমক্ষে সাইফ আলী খান অবশেষে প্রকাশ্যে এলো চিত্রনায়িকা পপির স্বামী-সন্তানসহ ছবি

ভিকারুননিসায় যৌন হয়রানি  শিক্ষক মুরাদের বিরুদ্ধে  ১৭ ছাত্রীর অভিযোগ

  • আপলোড সময় : ২৮-০২-২০২৪ ১০:২৮:২৮ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ২৮-০২-২০২৪ ১০:২৮:২৮ পূর্বাহ্ন
ভিকারুননিসায় যৌন হয়রানি  শিক্ষক মুরাদের বিরুদ্ধে  ১৭ ছাত্রীর অভিযোগ শিক্ষক মুরাদের
রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের আজিমপুর দিবা শাখায় সিনিয়র শিক্ষক মোহাম্মদ মুরাদ হোসেন সরকারের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি ও নিপীড়নের অভিযোগ করেছে ১৭ জন ছাত্রী। গত ২২ ফেব্রুয়ারি দাখিল করা তদন্ত প্রতিবেদনে ছাত্রীদের বক্তব্য উঠে আসে।
সম্প্রতি ছাত্রীদের ওপরে যৌন হয়রানি ও নিপীড়নের অভিযোগ ওঠে ভিকারুননিসার সিনিয়র শিক্ষক মোহাম্মদ মুরাদ হোসেন সরকারের বিরুদ্ধে। বিচার চেয়ে গত ৭ ফেব্রুয়ারি তার বিরুদ্ধে অধ্যক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন একজন অভিভাবক। এরপর কলেজ কর্তৃপক্ষ শিক্ষক মমতাজ বেগমকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। অপর দুই সদস্য হলেন শিক্ষক ড. ফারহানা খানম ও শামসুন আরা সুলতানা। এই কমিটি গত ২২ ফেব্রুয়ারি কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়।
জানতে চাইলে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কেকা রায় বলেন, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ওই শিক্ষককে অধ্যক্ষের কার্যালয়ে সংযুক্ত করেছি। তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে গত সোমবার রাতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গতকাল মঙ্গলবার তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, গত ৭ ফেব্রুয়ারি তিন জন ছাত্রীর অভিভাবক এবং আজিমপুর দিবা শাখার যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধ কমিটি’র সদস্যরা সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ মুরাদ হোসেন সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের যৌন হয়রানি ও নিপীড়নের বিচার চেয়ে অধ্যক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়,  মোট ৭৭ জন ছাত্রীর মধ্যে ৬০ জন ছাত্রী শিক্ষক মুরাদের পক্ষে ইতিবাচক মন্তব্য করেন। আর ১৭ জন ছাত্রী নেতিবাচক মন্তব্য করেন। ছাত্রীদের কাছে লিখিত প্রশ্ন সরবরাহ করে এসব মন্তব্য নিয়েছে তদন্ত কমিটি। যৌন হয়রানি ও নিপীড়নের কথা উল্লেখ করেছে ১৭ জন ছাত্রী। অভিযোগ রয়েছে, ভয়ে অনেক ছাত্রী লিখিত প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেনি।
তদন্ত প্রতিবেদনে একাদশ শ্রেণির দুই জন ছাত্রীর বক্তব্যে বলা হয়, তার (শিক্ষক মুরাদ) কাছে যারা কোচিংয়ে পড়ে, তাদের প্রতি তিনি অতিরিক্ত পরিমাণ স্বজনপ্রীতি প্রদর্শন করেন। তার ব্যবহারে (আচরণগত) সমস্যা আছে বলে অনেকের কাছে শুনেছি। স্যারের কোচিংয়ে এক জুনিয়রের (ছাত্রী) সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ আচরণ ঘটেছে। অন্য একজন ছাত্রী তদন্ত কমিটিকে বলেছে, মজা করতে করতে পাঠদান করেন। কিন্তু তার প্রাইভেটে পড়াকালীন তিনি আমার দুজন বন্ধুর সঙ্গে এবং আমার একজন জুনিয়র ছাত্রীর সঙ্গে বাজে অঙ্গভঙ্গি করেছেন। প্রাইভেট পড়ার সময় শরীর ও চুলে হাত দিতেন। মাঝে মাঝে আমাদের খাতার মধ্যে ‘ভালোবাসি’সহ অনেক ধরনের কথা লিখতেন। তাছাড়া তিনি আরেক ছাত্রীর সঙ্গে অশালীন আচরণ করতেন। তিনি স্কুলে এত না করলেও প্রাইভেট পড়ানোর সময় এসব করতেন।
তদন্ত কমিটির কাছে আরেক ছাত্রী বলেছে, আমার সঙ্গে কোনও অসামঞ্জস্যপূর্ণ আচরণ হয়নি। কিন্তু আমার সঙ্গে যারা কোচিং করেছে, তারা বলেছে যে সে খারাপভাবে স্পর্শ করেছে। অপর এক ছাত্রী বলে, যারা স্যারের কোচিং করতো, তাদের সঙ্গে একটু বেশিই ইন্টিমেট ছিলেন। অন্য এক ছাত্রী কমিটিকে বলেছে, স্যার কখনও আমার সঙ্গে কোনও বাজে আচরণ করেননি। তবে আমাদের জুনিয়র কিছু ছাত্রী কমপ্লেইন করেছে। তাদের মতে, স্যার অনেক টাচি ব্যবহার করেন। আমার আপন ছোট বোনও একই কথা বলেছিল আমাকে। একাদশ শ্রেণির এক ছাত্রী বলেন, আমার এক বান্ধবীকে একজন জুনিয়র ছাত্রী বলেছে, স্যার ওকে অশালীন কিছু বলেছে, আমি এরকমটি শুনেছিলাম।
স্কুল শাখার এক ছাত্রী বলেছে, আমি কখনও স্যারের কাছে কোচিং করিনি। পঞ্চম শ্রেণিতে থাকতে দশম শ্রেণির আপুদের কাছ থেকে স্যারের নামে অভিযোগ শুনেছিলাম। বেশ কয়েকজন আপু নাকি স্যারের কাছ থেকে ব্যাড (খারাপ) টাচের শিকার হয়েছেন। মাধ্যমিক শাখার তিন ছাত্রী বলেছে, এক ছাত্রী তাদের জানায়, তাকে রাতে ফোন দিয়ে কথা বলবে বলে জানান তিনি (শিক্ষক মুরাদ)।
মাধ্যমিকের অপর এক ছাত্রী তদন্ত কমিটিকে বলেছে, স্যার খুবই পক্ষপাতিত্ব করেন। তিনি তার পূর্ব  পরিচিত ছাত্রীদের অনেক স্পেশাল মনে করেন। তিনি সবসময় তাদের সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেন। তার প্রিয় ছাত্রীদের সঙ্গে খুবই ঘনিষ্ঠ হয়ে যান, মাঝে মাঝে। তিনি তার প্রিয় ছাত্রীদের স্পর্শও করে থাকেন। মাধ্যমিকের অপর এক ছাত্রী বলেছে, স্যার পড়া বোঝান ভালো, স্যারের আচরণ বেশি ভালো না। আর তিন জন ছাত্রী বলেছে, স্যার পড়ান ভালো, কিন্তু স্যারের অঙ্গভঙ্গি ভালো না।
অপর এক ছাত্রী বলেছে, স্যার গণিত ভালো বোঝান, অসামঞ্জস্যপূর্ণ আচরণ করেছেন বলা যায়। স্যার কোচিংয়ে আমাদের মজা করে জড়িয়ে ধরতে চেয়েছেন, তারপর হেসে বলেছেন, না মজা করছিলাম। অন্য এক ছাত্রী তদন্ত কমিটিকে বলেছে, মোটামুটি ভালো বোঝালেও তার আচার-আচরণ আমার কাছে ভালো লাগেনি। আরেক জন বলেছে, স্যার আমার সঙ্গে একটু কেমন যেন আচরণ করেন। তিনি একবার আমাকে চোখ টিপ মেরেছিলেন।
অন্য একজন ছাত্রী বলেছে, গত সোমবার রাতে একজন ছাত্রী আমার আম্মুকে ফোন করেছিল, যেহেতু আমি স্যারের কাছে পড়ি, আমাকে সতর্ক করতে। আরেক ছাত্রী বলেছে, সপ্তম শ্রেণিতে থাকাকালীন উনি আমাদের ক্লাস নিতেন, তখন প্রায়ই দেখতাম উনার কাছে যারা প্রাইভেট পড়ে তাদেরই শ্রেণিকক্ষে সব প্রশ্ন করার অনুমতি এবং তাদেরই বোর্ডে ডেকে অঙ্ক করাতেন। ১৭ জন ছাত্রীর এসব অভিযোগ থাকলেও আরও ৬০ জন ছাত্রীর বক্তব্য নিয়েছে তদন্ত কমিটি, যারা সবাই অভিযুক্ত শিক্ষকের ব্যাপারে ইতিবাচক কথা বলেছে। ১৭ ছাত্রীর অভিভাবকদের কারও কারও অভিযোগ তদন্ত কমিটি ৬০ জনের ইতিবাচক মন্তব্যকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে মূলত শিক্ষক মুরাদ হোসেন সরকারকে বাঁচানোর জন্য।  
তারা আরও অভিযোগ করেন, সে জন্যই তদন্ত কমিটি ওই শিক্ষককে বরখাস্তের সুপারিশ না করে তাকে প্রতিষ্ঠানটির মূল শাখায় অধ্যক্ষের কার্যালয়ে সংযুক্ত করার কথা সুপারিশ করে প্রতিবেদন দিয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষক বলেন, অধ্যক্ষ তদন্ত প্রতিবেদন পেয়ে তার কার্যালয়ে মোহাম্মদ মুরাদ হোসেন সরকারকে সংযুক্ত করেছেন। তদন্ত প্রতিবেদন ও অধ্যক্ষের ভূমিকা নিয়ে সন্তুষ্ট না হওয়ায় মুরাদ হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন একজন অভিভাবক। অথচ আজিমপুর দিবা শাখা যখন অভিযোগ আমলে নিয়ে ওই শিক্ষককে ক্লাস থেকে বিরত রেখেছে, তখন গভর্নিং বডি ও অধ্যক্ষ কোনও ভূমিকা নেননি।
জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কেকা রায় বলেন, আমি তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে ব্যবস্থা নিয়েছি। আমি কোনও পক্ষপাতিত্ব করিনি। তদন্ত কমিটিকে আমি কিছু বলিনি। তারা তাদের মতো করে প্রতিবেদন দিয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ৭ ফেব্রুয়ারি অধ্যক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করা হলেও পরের ১৫ দিনে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও ভাইরাল হলে ২৪ ফেব্রুয়ারি অভিযুক্ত শিক্ষক মুরাদকে অধ্যক্ষের কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়। গত সোমবার দিবাগত রাতে পুলিশ গ্রেফতার করলে গতকাল মঙ্গলবার অভিযুক্ত শিক্ষক মুরাদকে সাময়িক বরখাস্ত করে ভিকারুননিসা কর্তৃপক্ষ।
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স